মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার নতুন নিয়ম ২০২৫

২০২৫ সালে বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নতুন নিয়ম চালু হয়েছে, যা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নতুন নিয়মগুলোতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে যা আগের বছরের তুলনায় বেশ ভিন্ন। এই নিয়মগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. ভর্তি পরীক্ষার কাঠামো পরিবর্তন
২০২৫ সালের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। পূর্বে, ভর্তি পরীক্ষায় শুধুমাত্র এমসিকিউ (MCQ) প্রশ্ন ছিল। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষায় এমসিকিউর পাশাপাশি লিখিত অংশও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। লিখিত অংশে ছাত্রদের বিশ্লেষণমূলক ও বর্ণনামূলক উত্তর প্রদান করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীদের মেধার গভীর মূল্যায়ন সম্ভব হবে।
২. যোগ্যতার মানদণ্ড
আগের বছরগুলোর তুলনায়, ২০২৫ সালে মেডিকেল ভর্তির জন্য যোগ্যতার মানদণ্ডে কঠোরতা আনা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় পৃথকভাবে অন্তত জিপিএ ৪.৫ পেতে হবে। পাশাপাশি জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানে পৃথকভাবে ন্যূনতম ৭৫% নম্বর থাকতে হবে।
৩. আন্তর্জাতিক মানের সমতা
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী প্রস্তুত করা হবে। এতে পরীক্ষার্থীদের কেবল পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান নয়, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানও মূল্যায়ন করা হবে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত করা হবে।
৪. বিষয়ভিত্তিক পাস নম্বর
২০২৫ সালের নতুন নিয়মে, প্রতিটি বিষয়ে আলাদা পাস নম্বর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমসিকিউ এবং লিখিত অংশে আলাদাভাবে পাস করতে হবে। এমসিকিউ অংশে পাস নম্বর ৪০% এবং লিখিত অংশে পাস নম্বর ৫০% নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো অংশে পাস না করলে, শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য যোগ্য হবেন না।
৫. পরীক্ষার সময়সীমা ও সিলেবাস
পরীক্ষার সময়সীমা ২ ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে ৩ ঘণ্টা করা হয়েছে। সিলেবাসেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেখানে নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যেমন: চিকিৎসা নৈতিকতা, জনস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য নীতি। শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৬. প্রবেশপত্র প্রাপ্তি ও পরীক্ষার তারিখ
২০২৫ সালের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইন মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। শিক্ষার্থীরা অনলাইন মাধ্যমে আবেদন ফর্ম পূরণ করে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন। পরীক্ষার তারিখ পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে এক মাস আগে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে বেশি সময় দেবে।
৭. সংরক্ষিত কোটা
২০২৫ সালে কোটা পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা, উপজাতি, প্রতিবন্ধী এবং অন্যান্য সংরক্ষিত কোটার ক্ষেত্রে নির্ধারিত আসন সংখ্যার সাথে প্রয়োজনীয় শর্তাবলী কঠোরভাবে পালন করা হবে। তবে, সংরক্ষিত কোটা থেকে আসন পূরণ না হলে, তা মেধা তালিকার শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
৮. ফল প্রকাশ ও ভর্তির প্রক্রিয়া
পরীক্ষার ফলাফল অনলাইন মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে এবং শিক্ষার্থীরা ফলাফল জানার জন্য নির্ধারিত ওয়েবসাইটে লগইন করতে পারবেন। ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। শিক্ষার্থীদের মেধা তালিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে।
৯. অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া
ভর্তি প্রক্রিয়ায় কোনো শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের অভিযোগ থাকলে, তা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একটি অনলাইন অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে উপযুক্ত সমাধান প্রদান করা হবে।
এই নতুন নিয়মাবলীর লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচন করা এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করা। শিক্ষার্থীদের এই নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।